শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৬ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
সাপ্তাহিক সাহসী সময়ের ২৬তম বর্ষে পদার্পনে সকলকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন ৫৩তম মহান বিজয় দিবস আজ নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে খেজুরের কাঁচা রস পান না করার জন্য আহবান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মসূচি রাজবাড়ীতে হারানো ৩৫টি মোবাইল উদ্ধার করে মালিকদের কাছে হস্তান্তর করল পুলিশ রাজবাড়ীতে গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি কালুখালী উপজেলার হোগলাডাঙ্গী মাদ্রাসা থেকে দাখিল-আলিম পরীক্ষার কেন্দ্র স্থানান্তরে ১১টি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চয়তার পথে গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলায় ভ্যান উল্টে গভীর গর্তে পড়ে মসলা বিক্রেতা নিহত রাজবাড়ীতে সাহিত্যে বঙ্গবন্ধু শীর্ষক বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন ডিজিটাল যোগাযোগ ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের উদীয়মান ক্ষেত্র ঃ ভার্মা
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ঃ অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালী শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক

ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ঃ অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালী শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক

 শাহ্ মুজতবা রশীদ আল কামাল  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর(১৮২০-১৮৯১) হাজার বছরের ইতিহাসের ফল্গুধারায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালী। ২০০ বছরের কালগত দূরত্ব সত্ত্বেও তিনি আমাদের কাছে বহুমাত্রিকভাবে প্রাসঙ্গিক। তাঁর জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে ১৮২০ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা ভগবতী দেবী। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি শিক্ষা সংস্কার, আন্তরিকতা, কঠোরতা, মহানুভবতা ও নিষ্ঠার জন্য প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। যার কারণে তিনি অমর। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। মেরুদন্ড সোজা করে লড়াই করার শক্তি তিনি পিতৃসূত্রেই অর্জন করেছিলেন। পিতামহ রামজয় তর্কভূষণের কাছ থেকে বিদ্যাসাগর মানব সেবা ও দানশীলতার অনুপ্রেরণা অর্জন করেছিলেন। পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ সম্পর্কে বিদ্যাসাগর লিখেছেন, ‘তিনি নিরতিশয় তেজস্বী ছিলেন, কোন অংশে কারো নিকট অবনত হইয়া চলিতে বা কোন প্রকারের অবমাননা সহ্য করিতে পারিতেন না, তিনি সকল বিষয়ে স্বীয় অভিপ্রায়ের অনুবর্তী হইয়া চলিতেন।’ উত্তরকালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্রেও এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। জননী ভগবতী দেবীর কাছ থেকে বিদ্যাসাগর লাভ করেছিলেন নানামাত্রিক উচ্চ জীবনাদর্শ। আত্মসুখের চেয়ে অপরের  সুখই যে বড়-এই শিক্ষা বিদ্যাসাগর পেয়েছেন তাঁর মা ভগবতী দেবীর কাছ থেকে। তাঁর পিতার নির্দেশে তিনি লেখাপড়া করেছেন কলকাতার বিখ্যাত সংস্কৃত কলেজে। ১২বছরের অধিক সময় সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়ন করেন, অর্জন করেন প্রাচীন ভারতীয় নানা শাস্ত্রে অসামান্য ব্যুৎপত্তি। তিনি ১৮৩৯ সালের ২২শে এপ্রিল হিন্দু ল’ কমিটির কাছে পরীক্ষা দেন। যথারীতি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে একই বছরের ১৬ই মে ল’ কমিটির  কাছ থেকে যে প্রশংসাপত্রটি পান, তাতেই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিটি ব্যবহৃত হয়। পিতার আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে পাঠ সমাপ্ত করে বিদ্যাসাগরকে চাকরীতে প্রবৃত্ত হতে হয়। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ এবং সংস্কৃত কলেজ-প্রধানত এই দুই প্রতিষ্ঠানে বিদ্যাসাগর চাকরী করেছেন। তিনি প্রথমে চাকরীতে প্রবেশ করেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগের সেরেস্তাদার বা প্রথম পন্ডিতের পদে মাসিক ৫০ টাকা বেতনে। এই চাকরী প্রাপ্তিতে তাঁর পরিবারের দীর্ঘ দিনের আর্থিক দুরবস্থা দূর হয়। সংস্কৃত কলেজে চাকরীরত থাকা অবস্থায় কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ীতে বিদ্যাসাগর নিয়মিত যেতেন অংক শাস্ত্র, ইংরেজী ও হিন্দি ভাষা শিক্ষা লাভ করতে। তাঁর জ্ঞান স্পৃহা ছিল অসীম। সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনের উজ্জ্বলতম অধ্যায়। টানা ১২বছর অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। সংস্কৃত কলেজে চাকরী নিয়েই তিনি কলেজে সামগ্রিক অব্যবস্থা দূরীকরণ এবং উন্নত পাঠ চর্চার দিকে মনোনিবেশ করেন। এ সময় সংস্কৃত কলেজের অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। সংস্কৃতি কলেজের শিক্ষা সংস্কারের জন্য তিনি শিক্ষা সংসদের কাছে একটি পরিকল্পনা উপস্থাপনা করেন। এছাড়া শ্রী বিপিন বিহারী গুপ্ত রচিত সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি সংস্কৃত কলেজে তার ছাত্র কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্যকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেই সাক্ষাৎকারের কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো। যেমন-ব্রাক্ষ্মণ ও বৈদ্য ব্যতীত অন্য কোন বর্ণের শিক্ষার্থীদের সংস্কৃত কলেজে প্রবেশাধিকার ছিল না। তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে ব্যবস্থা করলেন যে, ‘জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দুর ছেলে মাত্রই এই কলেজে পড়তে পারবে।’ তিনি ইংরেজীতে অংক শাস্ত্র পড়ানোর ব্যবস্থা করলেন। ইংরেজী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে ভারতবর্ষের যুবকদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুললেন। আজ ইংরেজীতে গণিত শিক্ষার সুফল পাচ্ছে ভারত। তাঁর প্রচেষ্টায় সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা গ্রহণ কেবল ব্রাক্ষ্মণ ও বৈদ্যদের হাতে কুক্ষিগত থাকলো না। নিজে তিনি ব্রাক্ষ্মণ হয়েও এসব সংস্কারের মধ্য দিয়ে সর্বজনের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করলেন। তিনি জনশিক্ষা বিস্তারেও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি সমগ্র দক্ষিণ বাংলা মডেল স্কুলের পাঠক্রম রচনা করেন। স্কুলসমূহে যাতে যথাযথ পাঠ পদ্ধতি অনুসৃত হয়, সে জন্য তিনি ভারত সরকারকে বুঝিয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গণশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে মেদিনীপুরসহ নানা স্থানে তিনি দিবা ও নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন, যেখানে গ্রামের কৃষক, জেলে, কামার-কুমার সর্বশ্রেণীর শ্রমজীবী মানুষ লেখাপড়া করতেন। বিদ্যাসাগর স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দিতেন নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে, স্কুল পরিচালনার জন্য তাঁকে ঋণগ্রস্তও হতে হয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নিতেন না, বরং তাদেরকে পাঠোপকরণও তিনি নিজের অর্থে ক্রয় করে দিতেন। সাধারণ মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো জ্বলে উঠুক-এটাই ছিল বিদ্যাসাগরের স্বপ্ন। বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষা বিভাগের সহকারী ইন্সপেক্টরের চাকরী সূত্রে একত্রে ৫০০ টাকা বেতন পেতেন। উপার্জিত টাকা তিনি শিক্ষাসহ বিভিন্ন জনহিতকর কাজে ব্যয় করতেন। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ ভারতব্যাপী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে ভারত সরকারের নির্দেশে সংস্কৃতি কলেজ কোলকাতার বড়বাজারের ভাড়া বাড়ীতে স্থানান্তরিত হয় এবং সংস্কৃত কলেজের মূল ভবনে সরকারের অনুগত সৈন্যদের জন্য অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত এবং কলেজের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রতি অনীহা দেখে তিনি অধ্যক্ষ পদ থেকে সরে দাঁড়ান। জীবনে কখনো আপোষ করেননি এই বীর বাঙালী। নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য বিদ্যাসাগর বেছে নিয়েছিলেন প্রধানত চারটি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলকে। তিনি মোট ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এসব স্কুলের পাঠ্যক্রম তিনি নিেেজ প্রস্তুত করেন। তিনি নিয়মিত স্কুল পরিদর্শনে যেতেন, কখনওবা নিজেই শ্রেণী কক্ষে গিয়ে ক্লাস নিতেন। প্রথম ৬ মাস স্কুলের যাবতীয় খরচ তিনি নিজে বহন করতেন। কেবল নারী প্রাথমিক শিক্ষা নয়, তাদের উচ্চ শিক্ষার জন্যও বিদ্যাসাগর ভূমিকা পালন করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারীরা পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা এ বিষয়ে নিয়ে যখন বাদানুবাদ আরম্ভ হয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য বিদ্যাসাগর নারীর পরীক্ষা দেওয়ার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন। অবশেষে সিনেটের এক বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে বাংলায় নারী শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়। বিদ্যাসাগরের একান্ত আগ্রহের ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ১৮৭৮ সালে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের যে পান্ডিত্য ও জ্ঞান-তা অতুলনীয়। বাংলা ভাষা শেখানোর পদ্ধতি সহজ করার লক্ষ্যে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত ব্যাকরণের  আদলে বাংলা ব্যাকরণ লেখার উদ্যোগ নিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘ভাষা শিক্ষার ভিত মজবুত হয় সাহিত্য পাঠের মধ্য দিয়ে।’ বিদ্যাসাগর সুন্দর ভাষায় ও সুশৃঙ্খলভাবে বাংলা গদ্য লিখেছেন। বাক্যের ক্রিয়া, কর্ম-কর্তা কোথায় কীভাবে বসবে তিনি যেভাবে লিখেছেন সবাই তা অনুসরণ করেছেন। বাংলা বর্ণমালাগুলো সুশৃঙ্খল অবস্থায় এনেছেন, দাঁড়ি, কমা, সেমি-কোলন, প্রশ্নবোধক চিহ্ন-এগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করেছেন। যে কারণে তাঁর গদ্য ভাষা পড়তে গেলে  ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। এ জন্যই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে ‘বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী’ বলে অভিহিত করেছেন। শিল্পিত বাংলা গদ্য। এ কারণেই বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়। শুধুমাত্র ভাষা সাহিত্য চর্চা নয়। সেই সময় হিন্দু সমাজে মানুষের মধ্যে অনেক কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ভুল ধ্যান-ধারণা ছিল। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারমূলক কাজের মধ্যে সারা জীবন নিয়োজিত ছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাল্য বিবাহ বন্ধ করা। সেকালে  ৬-৭ বছর বয়সে ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দেয়া হতো। এটি বন্ধে তিনি প্রচার শুরু করেন। বহুবিবাহ অর্থাৎ পুরুষরা একাধিক মেয়েকে বিয়ে করতেন। এর বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার  ছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বড় উদ্যোগ ছিল বিধবা বিবাহ প্রচলন। তিনি লক্ষ্য করেন যে, স্বামী মারা গেলে সতীদাহের নামে মেয়েদের স্বামীর সঙ্গে  পুড়িয়ে মারা হয়। বিদ্যাসাগরের সময় সেটি বন্ধ হয়েছিল। যদিও রামমোহন রায়ের চেষ্টায় বৃটিশ সরকার আইন করে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেছিল। কিন্তু বিধবারা বেঁচে গেলেও তাদের জীবনযাত্রা কঠোর নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। সাদা কাপড় পড়ে থাকতে হবে, রঙিন কাপড় পরা যাবে না। খাবারেও বিধি-নিষেধ ছিল। পেঁয়াজ-রসুন খাওয়া যাবে না। বিদ্যাসাগর বিধবা নারীদের তথা নারীর অবমাননাকর ও অমানবিক এসব প্রথার বিলোপের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৮৫৫ সালে তিনি ‘বিধবা বিবাহ’ নামক পুস্তক রচনা করেন। বস্তুতঃ এ সংগ্রামের ফলশ্রুতিতেই বৃটিশ সরকার ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন প্রবর্তন করে। বিদ্যাসাগরের নিরলস পরিশ্রমের ফলে সমাজের অবহেলিত নির্যাতিত নারীরা মুক্তির দিশা খুঁজে পেয়েছে। ১৯ শতকে বাঙালী সমাজ সংস্কারক হিসেবে তাঁর অবদান স্বর্ণাক্ষরে  ইতিহাসে লেখা থাকবে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা করেছেন জনপ্রিয় শিশুপাঠ্য বর্ণ পরিচয়সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞান সংক্রান্ত অনেক প্রবন্ধ তাঁর আছে। তাঁর  উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো-কথামালা, বোধোদয়, আখ্যানমঞ্জুরী, ব্যাকরণ কৌমুদি, বেতাল, পঞ্চবিংশতি, শকুন্তলা, বিধবা বিবাহ (২ খন্ডে), বহু বিবাহ (২ খন্ডে), অতি অল্প হইলো (১৮৭৩), আবার অতি অল্প হইলো (১৮৭৩), ব্রজবিলাস (১৮৮৪) প্রভৃতি। ১৯ শতকের বাংলার নবজাগরণের এই মহান মনীষী দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে ছিলেন ‘দয়ার সাগর’ নামে। দরিদ্র, আর্ত ও পীড়িত কখনোই তাঁর দ্বার থেকে শূন্য হাতে ফিরে যেত না। এমনকি নিজের চরম অর্থ সংকটের সময়েও তিনি ঋণ নিয়ে পরোপকার  করেছেন। মানবতার এই শিক্ষাগুরুর কাছে আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সবাই ঋণী। বিদ্যাসাগরের চরিত্র মাহাত্ম্য মনে করিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন- ‘তিনি নবীন ছিলেন এবং চিরযৌবনের অভিষেক লাভ করে বলশালী হয়েছিলেন। তাঁর এই নবীনতাই আমার কাছে সবচেয়ে পূজনীয়, কারণ তিনি আমাদের দেশে চলার পথ প্রস্তুত করে গেছেন।’ সত্যিকার অর্থেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একজন সার্থক মনীষী, পরিশুদ্ধ বাঙালী শিক্ষাবিদ, সমাজের মুক্তির দিশারী, সফল সমাজ সংস্কারক। তিনি চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবেন-শ্রদ্ধায় আর ভালোবাসায়। ‘ঐ আসন তলে মাটির পরে লুটিয়ে রবো, তোমার চরণ ধুলায় ধুলায় ধূসর হব।’

তথ্য সূত্র ঃ বিনয় ঘোষ ঃ বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ, বেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ; অমরেন্দ্র কুমার ঘোষ ঃ যুগপুরুষ বিদ্যাসাগর, তুলি কলম, কলকাতা, ১৯৭৩; বিশ্বজিৎ ঘোষ ঃ বিদ্যাসাগর-অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালী, কালের খেয়া, সমকাল, ২০২০, আবুল কাশেম ফজলুল হক ঃ বিদ্যাসাগর আজও প্রেরণা, কালের কণ্ঠ, ২০২০, শাহরিয়ার সোহেল ঃ সাহিত্যিক ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, দৈনিক ইত্তেফাক-২০১৬।

লেখক পরিচিতি ঃ শাহ্ মুজতবা রশীদ আল কামাল, সহকারী অধ্যাপক, ডাঃ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, রাজবাড়ী।

 

 

 

 

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved  2022 sahasisamoy
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!